দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক ছাত্রী বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। নিজস্ব বাহন থাকায় এখন আর তাদের ভ্যান বা অটোর জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
স্থানীয়রা জানায়, চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে মেয়েরা এখানে এসে ভর্তি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষার্থী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১০-১২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে।
গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা হওয়ায় বৃষ্টি হলে সময়মতো অটো বা রিকশা পাওয়া যায় না। আবার পাওয়া গেলেও ভাড়া বেশি নেওযার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া একসঙ্গে দলবেঁধে স্কুলে আসায় নিরাপত্তা নিয়ে ভয় থাকে না।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে চিরিরবন্দর উপজেলার চিরিরবন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ শতাধিক। স্কুলটিতে উপজেলার ১০-১১ গ্রামের মেয়েরা পড়াশোনা করেত আসেন।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মনিরা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাইসাইকেলে করে স্কুলে আসা-যাওয়া করাতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। শুধু আমি একা নই, বান্ধবীরা মিলে দলবেঁধে স্কুলে যাই। সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াতে প্রথম দিকে অনেক কথা শুনতে হলেও এখন আর কেউ কিছু বলে না।
নবম শ্রেণির ছাত্রী শিমুল রায় কেয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্কুলে আগে হেঁটে যেতে হতো। এতে অনেক কষ্ট হতো। আবার অনেক সময় ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এতে স্কুলে যেতে অনেক সময় দেরি হয়ে যেত। এখন সাইকেল হওয়ায় সহজেই স্কুলে যাতায়াত করতে পারি।
সাইকেল কীভাবে এখানকার ছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠল? প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক মাহাতাব সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সময় ও অর্থ বাঁচাতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মেয়েদের সাইকেল চালিয়ে যাতায়াতের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়। এখন অভিভাবকরা নিজের ইচ্ছায় মেয়েদের বাইসাইকেল কিনে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আগে ছেলেরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে এলেও মেয়েদের ভ্যানে কিংবা হেঁটে আসা-যাওয়া করতে হতো। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে সাইকেল কিনে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, চার বছর আগে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রী সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করে। বর্তমানে দেড় শতাধিক ছাত্রী নিয়মিত সাইকেলে স্কুলে যাতায়াত করে।
বিদ্যালয়ে পড়াশোনা ভালো হওয়ায় ফলাফলও ভালো। বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনকে পরোয়া না করে এগিয়ে চলছে মেয়েরা। তারা নিরাপদে যাতায়াত করুক, এগিয়ে যাক আরও সামনে স্বপ্নের কাছে এই প্রত্যাশা।